সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইতিহাসের বীরযোদ্ধা মেজর আবু ওসমান চৌধুরী

বেলায়েত সুমন 


যুদ্ধের ডায়রী (ওয়ার ডাইরী)তে ভরা থাকে অনেক ঘটনা, অধিকাংশই স্কেচি, রেফারেন্স এর মতো। মূল কথাগুলো থাকে মেমোরীতে। সেক্টর কমান্ডার, মেজর আবু ওসমান চৌধুরী সব কথা লিখে যান নাই। কিন্তু কিছু ঘটনা ভিন্ন আঙ্গিকে লেখা হয়েছে দেশে-বিদেশে। তার সামান্য অংশ তুলে ধরছি। কেন? কারণ, ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর ওসমান এর কিছু কার্যক্রম আমাদের যুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য বলে মনে হয়েছে।

 ১ম ঘটনাঃ


’৭১ এর যুদ্ধের প্রথম কমান্ডের নামঃ ‘দক্ষিন-পশ্চিম কমান্ড (SOUTH WESTERN COMMAND), কমান্ডের জন্মঃ ২৬ মার্চ ১৯৭১ এর রাতে, চুয়াডাঙ্গায়। এর অধিনায়কঃ মেজর আবু ওসমান চৌধুরী, কমান্ডের প্রধান উপদেষ্টাঃ ডাঃ আসহাবুল হক, এমপিএ, ডেপুটী উপদেষ্টাঃ ব্যারিষ্টার আবু আহমেদ আফাজালুর রশিদ (বাদল রশিদ), এমএনএ, এবং এ্যাডভোকেট ইউনুস আলো, এমপিএ। কমান্ডের সদর দপ্তরঃ চুয়াডাঙ্গার জেলা পরিষদ ডাক-বাংলো।ক্যাপ্টেন এ আর আজম চৌধুরী ছিলেন যোগ্য সহ-অধিনায়ক। ১১ জুলাই ১৯৭১ অফিসিয়ালী সেক্টরের সীমারেখা ঘোষণা পর্যন্ত মেজর আবু ওসমান চৌধুরী SOUTH WESTERN COMMAND এর দায়িত্ব পালন করেন।


২য় ঘটনা


২৭ মার্চ ১৯৭১ এর দুপুরে ইপিআর এর উইং ৪ এর সদর দপ্তরে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উঠানো হয়।কোন সামরিক ইনষ্টিটিউশনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের সেটাই ছিলো প্রথম ঘটনা।

 ৩য় ঘটনা :


যশোর থেকে ২৭ বালুচ রেজিমেন্টের এক কোম্পানী (১৫৫) সেনা নিয়ে মেজর শোয়েব ২৫/২৬ মার্চ ১৯৭১ এ কুষ্টিয়ায় এসে পুলিশ লাইন, ভিএইচএফ ষ্টেশন, ও টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এলাকায় অবস্থান গ্রহন করে।  মেজর ওসমান ইতিমধ্যে স্থানীয় পুলিশ, আনসার, ও যুবকদের নিয়ে সংগঠিত হয়ে কুষ্টিয়া আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেন।কিন্তু আক্রমনের আগেই ২৮ মার্চ ১৯৭১ রাত ৯:৩০ মিনিটে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার ২৭ বালুচের মেজর শোয়েবকে আসন্ন আক্রমন সম্পর্কে তথ্য দেন। ২৯ মার্চ ’৭১ এর ভোড় ৩:৪৫ মিনিটে ইপিআর এর ৪ উইং কুষ্টিয়া আক্রমন শুরু করে তাদের ৩ ইঞ্চি মর্টারের গোলাবর্ষনের মধ্যে দিয়ে। বালুচ কোম্পানীর ২০টি লাশ রেখে হলে বাকীরা সেখান থেলে পালিয়ে গেলে সকাল ৯:৩০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ লাইন মুক্ত হয়।


৪র্থ ঘটনা:


২৯ মার্চ ’৭১ এর ভোড় ৩:৪৫ মিনিটে মেজর ওসমানের বাহিনী শহরের ভিএইচএফ ষ্টেশন ও টেলিফোন এক্সচেঞ্জ একই সাথে আক্রমন করে। সেখানে ২৫ জন পাকিস্তানী সেনার মৃত্যূ হলে মেজর শোয়েব যশোরে মেসেজ পাঠায় অতিরিক্ত সেনা পাঠানো ও বিমান আক্রমণের সহায়তা চেয়ে। যশোর থেকে মেজর শোয়েবের কাছে উত্তর এসেছিলোঃ “Troops here already committed. No reinforcement possible. Air strike called-off due to poor visibility, Khuda Hafiz” (বাংলাঃ সব সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, পাঠানোর মত কেউ অবশিষ্ট নেই। খারাপ আবহাওয়ার জন্য বিমান আক্রমন বাতিল করা হয়েছে। খোদা হাফেজ)

৫ম ঘটনা:


মেজর শোয়েব’ এর কোম্পানীর(১৫৫ জন)অবশিষ্ট মাত্র ৬৫ জন জীবিত ছিলো। ৯০টি লাশ কুষ্টিয়া শহরে ফেলে ২৯ মার্চ দিবাগত রাতে ৬টি জীপ, একটি ডজ (পিক-আপ) ও ১ট ৩টন ট্রাক নিয়ে কু শষ্টী শজটিয়া  ষ্টয়া ত্যাক করে, উদ্দেশ্যঃ কোনভাবে যশোর পৌছানো। লিড জীপে মেজর শোয়েব। হেড-লাইট নিভিয়ে চলতে যেয়ে পথিমধ্যে কুষ্টিয়া থেকে ২৫ কিঃমিঃ দূরে রাস্তার ভেঙ্গে ফেলা এক কালভার্টে মেজর শোয়েবের জীপ পড়ে গেলেই শুরু হয় দুই পাশ থেকে বৃষ্টির মতো গুলী। মেজর আবু ওসমানের দলের বৃষ্টি ঝড়া গুলীতে ৬৫ জন সেনার মধ্যে বেঁচে থাকা মাত্র ৯ জন ক্রলিং করে রাতের অন্ধকারে পাশের গ্রামে ঢুকে পড়লে সেখানেই তাদের হত্যা করা হয়।শেষ হয়ে যায় পাকিস্তান বাহিনীর ২৭ বালুচ রেজিমেন্টের একটি কোম্পানী। পাকিস্তানে বালুচ রেজিমেন্টাল সেন্টারে রয়েছে এই ১৫৫ জন সেনার স্মৃতি ফলক।

শেষকথা:


উপরের ঘটনাক্রম স্বাধীনতা যুদ্ধে মেজর আবু ওসমান চৌধুরী’র প্রাথমিক দিনের ঘটনাক্রম। কুষ্টিয়া দখল করে ট্রেজারী থেকে আনুমানিক ৪০/৫০ কেজি(!) সোনা এবং প্রায় ৪ লক্ষ(!) টাকা নুতন সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন, যা যুদ্ধের সেই প্রাথমিক দিনগুলোতে ছিলো সরকারের একমাত্র সম্বল। এই মহান মানুষটি আগষ্ট ১৯৭১ পর্যন্ত এই সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন।

REFERENCES:


A. Abu Osman Chowdhury, Military, military.wikia.org/wiki/Abu_Osman_Chowdhury
B.  “Confer Bir Uttam award on Abu Osman Chowdhury”, M. Emad, Oxford, UK, The Daily Star, 12:00 AM, December 14, 2012 / LAST MODIFIED: 12:00 AM, December 14, 2012
C. ‘Witness to Surrender’, Page 83~85, Siddiq Salik

Comments are closed.

More News Of This Category